তাহের উদ্দিন ঠাকুর, মন্ত্রী, সরাইল ব্রাহ্মণবাড়িয়া

তাহের উদ্দিন ঠাকুর
“ইতিহাসের পাতায় স্বাধীনতা উত্তর সরাইলের রাজনীতি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব” এবং বর্তমান অবস্থান, এই শিরোনামে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম এবং অনেকেই আমাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন।
স্বাধীনতা উত্তর সরাইলের রাজনীতি নিয়ে কিছু বলতে গেলে প্রথমেই যে নামটি চলে আসে তিনি হলেন জনাব তাহের উদ্দিন ঠাকুর, আজ আমরা বিস্তারিত ভাবে জানব সে সম্পর্কে।
নাম: তাহের উদ্দিন ঠাকুর
পিতার নাম : ফিরোজ উদ্দিন ঠাকুর
মাতা : আছিয়া খাতুন
পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা : জন্মস্থান, তদানীন্তন পূর্ববঙ্গের অত্যন্ত প্রসিদ্ধ সরাইল পরগনার সরাইলের শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য বড় দেওয়ান পাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৩৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন ।
তিনি দুই কন্যা এবং এক পুত্র সন্তানের জনক, ছেলে প্রফেসর ডক্টর হোসাইন উদ্দিন শেখর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত, বড় মেয়ে কানাডায় পি এইচ ডি সম্পন্ন করে চিকিৎসা বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত, ছোট মেয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে কানাডায় গমন করেন এবং সেখানে সপরিবারে স্থিতু হয়ে যান।
শৈশব ও স্কুল জীবন : তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের শৈশব শুরু হয় তৎকালীন ত্রিপুরা জেলার কুমিল্লায়, চাকুরির সুবাদে তাহের উদ্দিন ঠাকুরের পিতা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় ডেপুটি জেলার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তবে তার শৈশব শুরু হয় তৎকালীন ত্রিপুরা জেলার কুমিল্লাতে, কুমিল্লার ইউসুফ স্কুলে তার প্রাথমিক শিক্ষা জীবন জীবন শুরু হয়।
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবন: কুমিল্লার ইউসুফ হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন কমপ্লিট হলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন, পরবর্তীতে তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে ঢাকায় চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করেন।
ছাত্র রাজনীতি: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হয়ে ছাত্রদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে লিপ্ত হন এবং পুরোপুরি ভাবে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন, পরবর্তীতে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ভিপি পদে নির্বাচিত হন, এবং তার আগে তিনি ইউসুফ হাই স্কুলের ছাত্রাবাস্তায় একজন মেধাবী ছাত্রনেতা হিসেবে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি বহুবার জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন।
পারিবারিক জীবন: তার পিতা-মাতার গর্ভে তাহারা তিন ভাই এবং পাঁচ বোন, সবাই তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।
ব্যক্তি জীবনে তিনি বেগম শামসুন্নাহার এর সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। তার শশুর জনাব মুন্সি আরমান আলী ত্রিপুরা রাজ্যের একজন স্বনামধন্য আইনজীবী ছিলেন, তিনি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সময়ে লোকসভার সদস্য ছিলেন তিনি একাধিকবার রাজ্যসভার সদস্যও ছিলেন, তাহার আপন সমন্ধি জনাব আতিকুল ইসলাম ত্রিপুরার বিধানসভার সদস্য ছিলেন একাধিকবার। ডক্টর প্রফেসর হোসাইন উদ্দিন শেখর এবং স্বনামধন্য চিকিৎসক কানিজ জান্নাত উনার এ পক্ষের সন্তান।
১৯৮৭ সনে তিনি দ্বিতীয়বার কানিজ ফাতিমার সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন এ পক্ষে উনার একজন কন্যা সন্তান রয়েছে তিনি বর্তমানে কানাডা প্রবাসী।
পেশা : পেশায় তিনি ছিলেন প্রতিভাবান সাংবাদিক, ছাত্রাবস্থায় তিনি লেখালেখির সাথে যুক্ত ছিলেন এবং সাপ্তাহিক আমোদ (প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৫৫) পত্রিকার সহ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করতেন ।সাপ্তাহিক আমোদ তাদের হীরক জয়ন্তীংখ্যায় তৎকালীন সহ-সম্পাদক তাহের উদ্দিন ঠাকুরের লেখা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন, যা পাঠক গণের সুবিধার্থে সন্নিবেশিত করা হলো।
পরে তিনি তৎকালীন সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল প্রচারিত পত্রিকা ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা জনাব তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সাহেবের সান্নিধ্যে আসেন এবং প্রাথমিক অবস্থায় ইত্তেফাকের রিপোর্টার হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করেন।
১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট, ১৯৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ গন অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং ইত্তেফাকে নিউজ কাভার করতেন, এই সময় তিনি তদানীন্তন পাকিস্তানের নামকরা সাংবাদিকদের সান্নিধ্যে আসেন, উনার সাংবাদিকতা জীবনে উনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীরও স্নেহধন্য ছিলেন।
তিনি চট্টগ্রামের বহুল প্রচারিত পত্রিকা দৈনিক আজাদী পত্রিকায় “আরশিনগর” নামে একটি নিয়মিত ফিচার লিখতেন যেখানে তিনি তার ছদ্মনাম “পড়শী” ব্যবহার করতেন।
এছাড়াও তিনি ১৯৯৫ এরপর দৈনিক ডেইলি নিউজ নামের একটি বহুল প্রচারিত দৈনিক ইংরেজি পত্রিকা এবং দৈনিক দেশ পত্রিকার প্রকাশনায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতেন, তাছাড়াও তিনি বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠায় দায়িত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন।
গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি তার বন্ধু আউয়াল সাহেবের প্রাইম গ্রুপের এডভাইজার হিসেবে কাজ করতেন, ওনার চেম্বার ছিল বর্তমান সেনা কল্যাণ ভবনের অষ্টম তলায়,(বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল ভবনের পাশের বিল্ডিং) উনার চেম্বারে বসে বহুদিন আমার সাথে আর্থ সামাজিক, রাজনৈতিক ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শিক্ষামূলক আলোচনা করতেন এবং তিনি ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অধিকারীও ছিলেন আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত কথাগুলো শুনতাম , সূর্যকান্দির বশির খানেরও যাতায়াত ছিল সেখানে।
রাজনৈতিক ক্যারিয়ার: তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন, হলের সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিও ছিলেন, তখন থেকেই তিনি প্রসিদ্ধ পত্রিকা ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা জনাব তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সাহেবের সান্নিধ্যে আসেন এবং প্রাথমিক অবস্থায় রিপোর্টার হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করেন এবং তিনি বঙ্গবন্ধুর নিউজগুলো সুনিপুণ ভাবে তুলে ধরতেন।এর ধারাবাহিকতায় তিনি মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আসেন এবং তিনি বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পেয়ে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৬৯ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবুর রহমান মুক্ত হওয়ার পর তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়, বঙ্গবন্ধুর সাথে থেকে তিনি তার সমস্ত নিউজনিউজ কাভার করতেন, এভাবে তিনি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট হন এবং স্নেহভাজন হন।
১৯৭০ এর সাধারন নির্বাচন ঘোষিত হলে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের প্রার্থী হিসেবে জনাব তাহের উদ্দিন ঠাকুর কুমিল্লা-১ (নাসির নগর, সরাইল এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া থানার পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-১ আসন) থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন লাভ করেন।
এই নির্বাচনি প্রচার চলাকালীন সময়ে (৭ই ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদ নির্বাচন এবং ১৭ই ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিসদ নির্বাচন) প্রাদেশিক পরিসদ নির্বাচনে নাসির নগর (P/A-1) থেকে তাহের উদ্দিন ঠাকুরের সঙ্গে মোজাম্মেল হক কাপ্তান মিয়া প্রার্থী হিসেবে এবং (P/A-2)সরাইল থেকে সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান।
নির্বাচনি প্রচারাভিজানের সময় নভেম্বর মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ নাসির নগরে এক নির্বাচনে জনসভায় যোগদান করেন।ওই জনসভায় শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত সভাপতিত্ব করেন এবং তিনি বক্তৃতায় দুটো দাবি উত্থাপন করেন।
দাবি দুটো হলো সরাইল ঢাকা সিলেট রোড, আশুগঞ্জ হয়ে ঢাকা কানেক্টিভিটির জন্য দাবি করেন তৎসঙ্গে নাসিরনগর রোড যাহা লাখাই হয়ে হবীগঞ্জ পর্যন্ত কানেক্টিভিটি দাবি করেন এবং বলেন উনি মন্ত্রী থাকাকালীন সময় ও সুযোগের অভাবে উনি বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনি নাসিরনগরবাসীকে আহ্বান জানান বংবন্ধুর নৌকায় ভোট দানের জন্য।
বঙ্গবন্ধু উনার বক্তৃতার এক পর্যায়ে বলেন আপনারা আমার নৌকায় ভোট দিন আমি ইনশাআল্লাহ এই দুটি দাবি পূরণ করব এবং তিনি জনাব তাহেরউদ্দিন ঠাকুর এবং মোজাম্মেল হক কাপ্তানিয়াকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেন।
৭ই ডিসেম্বরের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তাহেরউদ্দিন ঠাকুর বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন এবং ১৭ ই ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে নাসিরনগর থেকে মোজাম্মেল হক কাপ্তান মিয়া এবং সরাইল থেকে সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম নির্বাচিত হন।
নির্বাচনের পর পাক জান্তারা বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে গরি মসি শুরু করেন তার পর ১৯৭১ এর ২৫শে মার্চ পাক আর্মি ক্র্যাক ডাউন করে, এর পূর্ব হতেই নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জনযুদ্ধ শুরু করেন। এই যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের বেঙ্গল রেজিমেন্ট /সেনাবাহিনী, ই পি আর, আনসার, পুলিশ, ছাত্রনতা সকলে মিলে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে জন যুদ্ধ শুরু করেন, ওই সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নির্বাচিত এম,এন,এ জনাব আলী আজম ভূঁইয়া এবং এম,এন,এ তাহের উদ্দিন ঠাকুর ভারতের ত্রিপুরায় গমন করেন করেন এবং তথা হইতে সর্বপ্রথম কিছু অস্ত্র ও গুলাবারুদ সংগ্রহ করতে সক্ষম হন।
তদাবস্থায় ১০ই এপ্রিল ১৯৭১ ইং তারিখে বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয় যাহা ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুর বৈদ্যনাথ তলায় মুজিবনগর সরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, ওই অবস্থাতেই তাহের উদ্দিন ঠাকুর ভারতের অন্যান্য স্থান সহ ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কার্যক্রম শুরু করেন, যেমন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অফিস স্থাপন, যুব শিবির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদিতে তাহের উদ্দিন ঠাকুর অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সহিত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।
তদপর এক পর্যায়ে সরকারের হাই কমান্ডের নির্দেশে কলিকাতাস্থ মুজিবনগর সরকারের সাথে মিলিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অন্যান্যদের সাথে জনাব উদ্দিন ঠাকুর ও দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অধিষ্ঠিত হন এবং বঙ্গবন্ধু ও তার ক্যাবিনেট ডঃ কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সংবিধান রচনার উদ্যোগ নেন এবং সেখানেও জনাব তাহেরউদ্দিন ঠাকুর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।
তারপর ১৯৭৩ সনের নির্বাচনে সরাইল থেকে তাহের উদ্দিন ঠাকুর আওয়ামী মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সাংসদ নির্বাচিত হন।
মন্ত্রিত্ব গ্রহণ এবং রাজনৈতিক ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড: ১৯৭৩ সনের নির্বাচনে সরাইল থেকে তাহের উদ্দিন ঠাকুর সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হন, এবং ওই কেবিনেটে তাহের উদ্দিন ঠাকুর তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
এখানে উল্লেখ্য যে তিনি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার আগেই ১৯৭২ সনে সরাইল নাসিরনগর রোডের বাস্তবায়ন করেন এবং মন্ত্রী হবার পর সরাইল আশুগঞ্জ রোড যা বর্তমানে বিশ্বরোড নামে পরিচিত বাস্তবায়ন করেন যার মাধ্যমে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের দাবি এবং বঙ্গবন্ধুর দেওয়া নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ করেন।
সরাইল আশুগঞ্জ রাস্তার উত্তর পার্শ্বে পাশের খাল, শাহবাজপুর হতে মেঘনা পর্যন্ত জাফর খাল খননের মাধ্যমে তিতাস ও মেঘনার পানি দিয়ে সবুজ বিপ্লবের সূচনা করেন।
জনাব ঠাকুর তার সময়ে সরাইল এবং নাসিরনগর বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন সহ অন্যান্য জনহিতকর কাজ করেন। তিনি তার আমলে অনেক বেকার যুবককে চাকরি পেতে সহযোগিতা করেন।
তিনি বঙ্গবন্ধুর সহিত বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন এর এর আগে সাংবাদিক হিসেবেও তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। সেই সুবাদে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পান, ১৯৭৪ ইংরেজি সনে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ও,আই,সি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জনাব তাহেরউদ্দিন ঠাকুর ডক্টর কামাল হোসেন, তোফায়েল আহমেদ সহ পাকিস্তানের লাহোরে অংশগ্রহণ করেন। এবং বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন।
১৯৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর তিনি খন্দকার মোস্তাকের মন্ত্রীসভায় যোগদান করেন এবং প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও তার জেল জীবন: ১৯৭৫ এর ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় এবং ৩রা নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে জেলে বন্দি অবস্থায় অবস্থায় হত্যা করা হয়।
১৯৯৬ সালের ৩রা অক্টোবর প্রথমে তাকে জেল হত্যা মামলায় এবং পরে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় তারপর শেখ মণি হত্যা মামলা সহ আরো কয়েকটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়, পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মামলার বিচারে তার তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সরকার প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় আদালত তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন ।
ব্যক্তি জীবনে তিনি যে একজন সৎ, নির্লোভ এবং নীরঅহংকারী মানুষ ছিলেন, তার কোন কানা কড়িও ব্যাংক ব্যালেন্স ছিলনা, বাড়ি গাড়ি কিছুই ছিল না, তেমন উল্লেখযোগ্য কোন সহায় সম্পত্তি ও ছিল না পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত সরাইলের বড় দেওয়ান পাড়ার বাড়িতে কয়েকটি টিনের ঘর ছিল ।
প্রকাশিত গ্রন্থাবলী: তার প্রকাশিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুলি হল, আসল শহীদ নকল গাজী, বিজয়ের পরাজয়, তাহাদের কথা এবং শুভ কেন আসে না, কাল বিচ্ছু ইত্যাদি, এবং তার অনেকগুলো ও অপ্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে।
অসুস্থতা এবং মৃত্যু: জেলে থাকা অবস্থায় তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন, কিডনি জটিলতা সহ নানাবিধ সমস্যায় আক্রান্ত হন এবং ২০০৯ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারিতে পরলোক গমন করেন ।
জনাব তাহের উদ্দিন ঠাকুর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে যিনি আমাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন তিনি হলেন তৎকালীন সময়ের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী (P/A-2) পরবর্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম সাহেবের ছোট ভাই অ্যাডভোকেট সৈয়দ শফিকুল ইসলাম (তিনিও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা) তৎকালীন সময়ের জনপ্রিয় ছাত্রলীগ নেতা, তিনি তাহের উদ্দিন ঠাকুরের ছোট ভগ্নিপতি।
আরো যারা বিভিন্ন তথ্য ও ছবি দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তারা হলেন উনার সহধর্মিনী কানিজ ফাতেমা, সৈয়দ তাওয়াবুল ইসলাম কার্জন, সৈয়দ এনামুল ইসলাম মিল্টন, পামেলা ইসলাম, সামিউল ইসলাম ইমন, নাফিউল ঠাকুর ইসলাম , ঐশী ঠাকুর প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *